1. news@sheershabangla.com : শীর্ষ বাংলা শীর্ষ বাংলা : শীর্ষ বাংলা শীর্ষ বাংলা
  2. info@www.sheershabangla.com : শীর্ষ বাংলা :
সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
চিকনাগোল বাজার ইজারার শর্তাবলীর দিকে এগিয়ে ইকবাল হোসেন দুলাল জৈন্তাপুরে র‍্যাবের অভিযানে ৯৬ বোতল মদ সহ ১জনকে আটক পুলিশের পৃথক দুটি অভিযানে চকলেট মদ সহ ৬ আটক বাসপ্রাবি প্রধান শিক্ষক সমিতি জৈন্তাপুর শাখার ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন ভারতে অনুপ্রবেশ করে কয়লা আনতে গিয়ে কোয়ারি ধ্বসে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু দি মেঘালয় টি এষ্টেট ইজারা বাতিল এবং ভূমিহীন বসতবাড়ী রক্ষার দাবীতে বিভাগীয় কমিশনার সহ সর্ব মহলেে আবেদন জৈন্তাপুরে নদী হতে ভাসমান মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় কসমেটিক উদ্ধার জৈন্তাপুরে মহান মে দিবস উপলক্ষে র‍্যালী ও আলোচনা সভা সিলেট সহ ৬ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃ ত্যু

জৈন্তিয়ার সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে ইংরেজরা জৈন্তিয়া দখল

শীর্ষ বাংলা
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে
Oplus_131072

আগামী ১৬ মার্চ স্বাধীন জৈন্তিয়া রাজ্যের পতনের ১৮৭ বছর পূর্ণ হবে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জনৈক সামরিক কর্মকর্তা- ছাতকের ইংলিশ কোম্পানির ক্যাপ্টেন হেরি ইংলিশের সৈন্যদের হাতে স্বাধীন জৈন্তিয়ার পতন ঘটে।

জৈন্তিয়ার সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে এবং প্রতারণা, জালিয়াতী ও বিশ্বাসঘাতকতার এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইংরেজরা জৈন্তিয়া দখল করে নিলেও ইতিহাসে আজও সে বিষয়টি তেমন পরিস্কারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। বরং ইংরেজ কর্মকর্তাদের হাতে রচিত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে অনেক বাঙ্গালী লেখকও জৈন্তিয়ার বিরুদ্ধে কেবল কুৎসা রটিয়েই গিয়েছেন। জৈন্তিয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়া মিথ্যা নরবলীর অপবাদ আজও পূর্ণ মাত্রায় প্রতিষ্ঠিতই রয়ে গিয়েছে। ইংরেজরা বাঙলা দখলের পরে যেভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলার নামে ‘অন্ধকূপ হত্যাকাণ্ডের’ অপবাদ আরোপ করেছিল একইভাবে তারা জৈন্তিয়ার শেষ রাজা রাজেন্দ্র সিং এর নামেও মিথ্যা নরবলীর অপবাদ রটিয়েছে।

আজকের অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, এসব মিথ্যা রটনা ও নানান কুসংস্কার-গুজবের মধ্যে একটি অসম্ভব সুন্দর রাজ্যের সোনালী ইতিহাস বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জৈন্তিয়াবাসী আজও জানেনা যে জৈন্তিয়ার শেষ রাজা রাজেন্দ্র সিং ছিলেন একজন অল্পবয়ী বালকমাত্র। তিনি ছিলেন ঘোর বৈষ্ণব মতের অনুসারী এবং কবিও বটে! নরবলী দেওয়ার কল্পনাকেও তিনি পাপ মনে করতেন! জৈন্তিয়াবাসী আজও জানেনা যে, জৈন্তিয়ার কোন রাজাই কখনও কোন ইংরেজ প্রজাকে বলী দেননি বরং উল্টো ইংরেজ কর্মকর্তারা জৈন্তিয়ার ইতিহাসকেই বলী দিয়ে বসে আছেন!

১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের জৈন্তিয়া দখলের ঘটনাটি ছিল তাদেরই আইনে অবৈধ! অবৈধ হওয়ার কারণ হল ‘রামসিংহ-ডেভিড স্কট চুক্তি’। ১৮২৪ সালে সম্পাদিত এ চুক্তিতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জৈন্তিয়ার স্বাধীনতাকে আজীবনের জন্য স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের মাত্র ১১ বছরের মাথায় ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির স্থানীয় সৈন্যরা হঠাৎ করে জৈন্তিয়া দখল করে নেয়! এটি ছিল সুস্পষ্টভাবেই ইংরেজ আইনের লঙ্ঘণ।

এই বেআইনী কাজটি করেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সিলেটের হর্তা-কর্তারা। ইংরেজ সরকার তো বটেই এমনকি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানতেন না। জৈন্তিয়া দখলের পরে এই ব্যাপারটিকে যখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয় তখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের এই কাজটির পক্ষে একটি ‘আইনী অজুহাত’ সৃষ্টি করেন। এই অজুহাতটি ছিল ‘জৈন্তিয়ার রাজা কর্তৃক’ নরবলীর ঘটনার একটি আষাঢ়ে গল্প!

এ গল্পটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য স্থানীয় ইংরেজ কর্মকর্তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করার সময় অনেক মিথ্যা ও ভুল তথ্য জুড়ে দিয়েছিলেন। যেসব ইংরেজ কর্মকর্তারা এ অঞ্চলের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন তারাও ঐ মিথ্যা তথ্যগুলোকে ইতিহাসের অংশে পরিণত করেছেন। দুঃখের বিষয় যে, সৈয়দ মুর্তাজা আলী ছাড়া প্রায় সকল বাঙালী ঐতিহাসিকই জৈন্তিয়ার ইতিহাস লিখতে গিয়ে ঐ ভুল তথ্যগুলোর আশ্রয় নিয়েছেন!

তারা প্রায় সকলেই ‘হিস্টরি অভ আসাম’ গ্রন্থের লেখক স্যার এডওয়ার্ড গেইটের ভুল তথ্যগুলোকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এডওয়ার্ড গেইট তাঁর বইতে খুবই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে লিখেছেন যে, জৈন্তিয়ার রাজারা তাদের রাজধানী নিজপাটে নিয়মিতই নরবলী দিতেন! এই মিথ্যাচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি জৈন্তিয়ার রাজধানী নিজপাটের জৈন্তেশ্বরী বাড়ীটিকে ‘মা জৈন্তেশ্বরীর শক্তিপীঠ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অথচ প্রকৃত সত্য হল, জৈন্তেশ্বরী বাড়ীটি কোনভাবেই ‘মা জৈন্তেশ্বরীর শক্তিপীঠ’ নয় বরং এটি ছিল জৈন্তিয়ার রাজাদের রাজদরবার। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিখ্যাত ঐ শক্তিপীঠটির অবস্থান হল জৈন্তিয়ার রাজধানী নিজপাট থেকে শত শত মাইল দূরের নার্থিয়াং পুঞ্জিতে- যেখানে আজও এই মন্দিরটি দেখার জন্য সারা ভারতের পর্যটকরা ছুটে যান!

এডওয়ার্ড গেইট লিখেছেন যে, জৈন্তিয়ার রাজা যশোমানিক তাঁর শশুরের কাছ থেকে একটি ধাতব কালীমূর্তি উপহার পাওয়ার পর সেটি তাঁর রাজধানী নিজপাটে এনে স্থাপন করেছিলেন এবং এখানে নরবলী প্রথার সূচনা ঘটিয়েছিলেন! ‘জৈন্তেশ্বরী কালী’ নামে স্থাপিত সেই চন্ডীমণ্ডপে নাকি নিয়মিত নরবলী দেওয়া হতো। বাঙালী লেখকরাও তাদের লেখায় এমন দাবী করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, যশোমানিক কর্তৃক স্থাপিত সেই মন্দিরটি হল নিজপাট থেকে বহুদূরে অবস্থত নার্থিয়াং দূর্গা (কালী নয়) মন্দির যা ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম!

এটি মা জৈন্তেশ্বরী দেবীর শক্তিপীঠ নামে পরিচিত। কিছু সূত্র অনুযায়ী, রাজা যশোমানিক স্বপ্নে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে সেই শক্তিপীঠ খুঁজে পেয়েছিলেন। এই গল্পে শশুর কর্তৃক দেবমূর্তি উপহার পাওয়ার কথা নেই। আবার কিছু সূত্রে যশোমানিকের স্থলে ধনমানিকের কথাও বলা হয়েছে। তবে এখানে যে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বছরে একবার নরবলী দেওয়া হতো- এটি সত্যি। এই নরবলী ছিল পুরোপুরিভাবে একটি ধর্মীয় প্রথা। এর সাথে রাজা, রাজ্য বা রাজনীতির সম্পর্ক ছিল খুবই গৌণ।

জৈন্তিয়ার আরেকটি স্থানে নরবলী হতো। সেটি হল- ফালজুরের বামা জঙ্ঘা পীঠ। এ দুটি শক্তিপীঠ ছাড়া জৈন্তিয়ার আর কোথাও তেমন কোন নরবলীর ঘটনা জানা যায় না। রাজধানী নিজপাটে রাজার যে আদালত বসতো সেখানে যদি কারও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো তবে তা কোথায় কার্যকর করা হতো সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। যদি সেসব মৃত্যুদণ্ড রাজদরবার প্রাঙ্গনে কার্যকর করা হয়েও থাকে তবে তার সাথে জৈন্তেশ্বরী শক্তিপীঠের নরবলীর ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই।

মিস্টার এডওয়ার্ড গেইট তাঁর বইতে নিজপাটের যে ‘জৈন্তেশ্বরী কালীর’ কথা বলেছেন সেটির কোন অস্তিত্বই নেই! ইংরেজরা দূরভীসন্ধিমূলকভাবে এই তথ্যটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। জৈন্তিয়ার দুটি স্থানে ধর্মীয় রীতিতে যে নরবলী হতো তা একটি বিতর্কিত প্রথা হলেও এ নিয়ে ইংরেজদের কোন অভিযোগ ছিল না। কদাচিৎ সংঘটিত ওসব নরবলীর ঘটনা ছিল ধর্মীয় কুসংস্কারপ্রসূত। এগুলোর সাথে জৈন্তিয়ার রাজা, রাজধানী বা রাজ-সরকারের তেমন কোন যোগসূত্র ছিল না।

রাজারা নরবলী দিতেন না; এটি ছিল জৈন্তেশ্বরী মন্দিরে নিযুক্ত মারাঠী বংশের পুরোহিতদের কাজ। জৈন্তিয়া দখলের পরে ইংরেজরা বিভিন্নভাবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন যে, জৈন্তিয়ার রাজধানীতে রাজার হুকুমে নরবলী হতো! হায়! ইংরেজরা যে রাজাকে নরবলীর অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল তিনি কোনভাবেই নরবলীতে বিশ্বাস করতেন না। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণব!

তার আগের রাজার আমলে সেই রাজার সম্পূর্ণ অজান্তে রাজধানী থেকে বহুদূরে আসামের গোভা অথবা ফালজুরের বামাজঙ্ঘা পীঠে কিছু দুষ্কৃতিকারীদের হাতে চারজন অথবা দুইজন ইংরেজ প্রজা নিহত হয়েছিলে। সৈয়দ মুর্তাজা আলী বলেন, জৈন্তিয়ার তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় রামসিংহ সেই দুষ্কৃতিকারীদেরকে ইংরেজ করতৃপক্ষের হাতে সোপর্দ করেছিলে। দ্বিতীয় রামসিংহ ছিলেন ইংরেজদের ঘনিষ্ঠ মিত্র! তাই এমন হওয়াটা মোটেই বিচিত্র নয়।

দ্বিতীয় রামসিংহের পরবর্তী রাজা কিশোর বয়সী রাজেন্দ্র সিংহও ছিলেন ইংরেজদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু ইংরেজরা হঠাৎ করে তাঁর রাজ্য কেঁড়ে নেয়। এরপর তারা জৈন্তিয়ার ওপর নরবলীর অপবাদ চাপাতে থাকে। শেষ রাজার আগের রাজার আমলে হওয়া ঐ ইংরেজ প্রজা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে তারা জৈন্তিয়া দখলের পেছনে একটি ‘আইনী অজুহাত’ হিসেবে খাড়া করে। এটি করতে গিয়ে তারা অনেক মিথ্যার আশ্রয় নেয়। জৈন্তিয়াকে তারা একটি ‘নরবলীর দেশ’ এবং জৈন্তিয়ার রাজধানীকে তারা একটি ‘নরবলীর রাজধানী’ হিসেবে প্রচার করে। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, জৈন্তিয়ার মানুষ আজও এই অপপ্রচারকেই বিশ্বাস করে এবং জৈন্তিয়া মানেই একটি ‘নরবলীর দেশ’ মনে করে!

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট